Explore

Search

May 20, 2025 12:45 pm

IAS Coaching

কি কারনে এভারেস্ট বিজয়ী হয়েও ঘরে ফিরলেন না বাঙালি পর্বতারোহী সুব্রত ঘোষ, কি হয়েছিল পড়ুন বিশ্লেষণ

#নিউজ বৃত্তান্তঃ বাংলা আবারও হারালো একজন এভারেস্ট বিজয়ীকে। স্কুল শিক্ষক সুব্রত ঘোষ এভারেস্ট বিজয়ী হয়েও ফিরতে পারলেন না চতুর্থ ক্যাম্পে। নেপাল সরকার এবং তাঁর এজেন্সি ও শেরপা তাঁর মৃত্যুর খবর স্বীকার করে নিয়েছেন। এরকম পরিস্থিতিতে ঠিক কি হয়েছিল এই অভিযানে, কোথায় কি পদক্ষেপ নেওয়া দরকার এগুলো নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করলেন রায়গঞ্জ কালিয়াগঞ্জের বিশিষ্ট পর্বতারোহীরা। রায়গঞ্জের প্রবীন পর্বতারোহী তাপস জোয়ারদার বলেন, প্রথমেই একজন পর্বতপ্রেমী পর্বতারোহী হিসেবে সদ্য এভারেস্ট অভিযানে যিনি সাফল্যের মুখ দেখেও ফিরে আসতে পারলেন না আমাদের মাঝে – সুব্রত ঘোষের পরিবারকে জানাই সমবেদনা।

এভারেস্ট অভিযান এর ১০০ বছরের ইতিহাসে প্রায় ৩৪৫ জন কে হারালাম আমরা। ইতিহাস বলে বেশির ভাগ টাই অদম্য জোশ এর কারণে ভুল সিদ্ধান্ত – বেসিক কিছু নিয়ম কে না মেনে চলা। মাউন্টেনিয়ারিং স্পোর্টস এর সাথে জীবনের একটা ঝুঁকি থেকে যায় বলেই- অ্যাডভেঞ্চার শব্দটি জড়িয়ে আছে এর প্রতিটি পদে। প্রায় ২৫ বছর বিভিন্ন অভিযানে গিয়ে এটা আমার ব্যক্তিগত উপলব্ধি – কোথায় থামতে হবে, কোথা থেকে ফিরে আসতে হবে –== এটা নিজে কেই ঠিক করতে হবে। সাথে বেসিক কিছু রুল – মেনে চলতেই হবে। পাহাড় তার জায়গা তেই থাকবে – হারিয়ে যাবে না। নিজের জন্য, পরিবার এর জন্য ফিরে আসার কথাটা মাথায় রাখতেই হবে।

পাশাপাশি কালিয়াগঞ্জের পার্থ প্রতীম রায় বলেন, আবার একটা মৃত্যু। আবার এভারেস্টেই। শীর্ষে আরোহন করেও ফিরতে পারলেন না রানাঘাটের সুব্রত ঘোষ।একজন পাহাড়প্রেমী মানুষের এভাবে চলে যাওয়ায় অন্তর থেকে বিষন্ন, শোকস্তব্ধ। আমরা যারা পাহাড় ভালোবাসি, ট্রেক বা ক্লাইম্ব করি, তারা জানি এই এডভেঞ্চার স্পোর্টসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো টাইমিং। সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। যে কোনো পাস অতিক্রম বা শৃঙ্গ জয় করার সঠিক সময় মোটামুটি সকাল ৮ টা। এর থেকে যত বেশি দেরী হবে ততই রিস্ক ফ্যাক্টর বেড়ে যাবে। ওয়েদার খারাপ হতে থাকবে,সাথে সাথে শারীরিক স্বক্ষমতা কমতে থাকবে।এখানেও হয়তো তাই হয়েছিল। অভিযাত্রীরা সাধারণত প্রথম দিন বিকেল অথবা সন্ধ্যে বেলায় ক্যাম্প ফোর থেকে বেরিয়ে সকালে ৮ টা নাগাদ এভারেস্ট শীর্ষে আরোহন করেন। কিন্তু তাদের রওনা হতেই রাত ১১টা বেজে গিয়েছিলো। ক্লাইম্ব হয়েছিল পরদিন দুপুর ২ টায়। অক্সিজেনের ঘাটতি আর শারীরিকভাবে নিঃশেষ হয়ে যাওয়ায় হয়তো,তার আর ফেরা হলোনা।

আমাদের মত মধ্যবিত্ত অভিযাত্রীদের অনেক সমস্যার মধ্যে অন্যতম হলো অর্থের সমস্যা। এই সমস্যার সমাধান করতে ঋণ করতে হয়, প্রয়োজনে ব্ন্ধক রাখতে হয়, বিভিন্ন চুক্তিতে স্পনসর জোগাড় করতে হয়। সুতরাং, শৃঙ্গ আরোহন করার বাধ্যবাধকতা থাকেই। কারন একবার সফল না হলে দ্বিতীয় বার আবার সমস্ত কিছু নতুন করে শুরু করা অত্যন্ত কঠিন কাজ।তাই বারবার একই ভুল, ভুল সিদ্ধান্তের বলি হচ্ছেন কিছু মধ্যবিত্ত অভিযাত্রী। যাদের অদম্য সাহস, প্রবল ইচ্ছেশক্তি থাকা স্বত্বেও হারিয়ে যাচ্ছেন হিমালয়ের গহীনে।

বিভিন্ন ট্রেকিং গ্রূপের সাথে যুক্ত থাকায় ইদানিং দেখতে পাচ্ছি সস্তা জনপ্রিয়তা, কিছু ভালো ছবি তোলার নেশায় অনেকে নিজের শারীরিক সক্ষমতাকে অস্বীকার করে এমন উচ্চতায় ওঠার চেষ্টা করছেন,যেটা তার পক্ষে অসম্ভব। তাই বারে বারে দুর্ঘটনা ঘটছে। গত কয়েক বছরে সান্দাকফুতেত বেশ কয়েকজন অভিযাত্রীর মৃত্যু আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছে, আমরা কি ভুল করছি।তা স্বত্বেও আমরা শিক্ষা নিতে পারিনি। এটাও আমাদের দৈন্যতা।

এবার অনেকেই ভাবতে পারেন, কি প্রয়োজন? কেন এতো রিস্ক নেওয়া? কেন? এখানেই আসে ভালোবাসার গল্প। পাহাড়কে ভালোবাসা, হিমালয়কে ভালোবাসা,প্রকৃতিকে ভালোবাসার গল্প। এই অমোঘ টানকে আমরা যে কিছুতেই উপেক্ষা করতেই পারি না। অসংখ্য ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরেও,অসংখ্য মৃত্যু দেখার পরেও বারেবারে ফিরে যাই পাহাড়ে,…. হিমালয়ে,…. “Because it is there “.

Advertisement
Live Cricket Score
upskillninja